ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ
২০০০ সালের গোড়ার দিক। একটি বিদেশি পত্রিকার সম্পাদনার বোঝা ঘাড় থেকে নামিয়ে সবে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম ভাবছি, আর এক ভূত উড়ে এসে জুড়ে বসল ঘাড়ে। ঘোরাফেরা করছিলই সে। জাঁকিয়ে বসল, যখন সমরেশদার ‘কইতে কথা বাধে’ শেষ না হয়েই শেষ হয়ে গেল। অপ্রিয় সত্যকথনে প্রিয়জনরা তখন সমরেশদার মুণ্ডপাত করছেন যে যাঁর মতো; অবশ্যই তাঁর আড়ালে-আবডালে। একদিন পূর্ণদাস রোড়ে সমরেশদার অফিসে হানা দিয়ে বললাম,- একটি নতুন মাসিকপত্র শুরু করতে চাই; নাম ভেবেছি-‘পত্রপাঠ’। আপনাকে প্রতি সংখ্যাতেই লিখতে হবে। এই যে কইতে কথা সত্যিই বেধে গেল, তা আবার চালু করতে হবে, কইতেই হবে অবরুদ্ধ কথাগুলি। পত্রিকার নামটা শুনেই সমরেশদা হা হা করে দরাজ গলায় হেসে উঠে বললেন,- ‘পত্রপাঠ’! সত্যি, তোমার মাথায় আসেও বটে! ঠিক আছে লিখব।
সমরেশদার বিরল স্নেহে ততদিনে এ অধম সমরেশ মজুমদার রূপী ধৃতরাষ্ট্রের দুর্যোধন। শুরু হল কাগজ। ‘কইতে কথা বাধে’ শিরোনামটি শুধু বদলে গেল, কলমের নাম দিলেন- ‘অকপটে’। বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ধাক্কা সামলাতে প্রথম-প্রথম ‘অকপটে’ একটু সতর্ক পা ফেলছিল বটে, কিন্তু নাচের পা কি আর বেতালে চলতে পারে? ফিরে এল ছন্দের অচিরাৎ।সাহিত্য, সমাজ, রাজনীতি, ছাড় পায়নি কেউই।
এ বইয়ের সবচাইতে বড় গুন, প্রায় প্রতিটি রচনাতেই গল্পে স্বাদ। কোনো-কোনোটি তো একেবারে ‘সত্যি নয়, গল্প’। তাঁর রচনার গুণাগুণ যদি এই অধমাধম বর্ণনা করার চেষ্টামাত্রও করে, তবে পাঠককূল যে ‘রেগে আগুন তেলে বেগুন’ হবেন তাতে সন্দেহ নেই।
শেখর আহমেদ